লিভার খারাপ হওয়ার লক্ষণ গুলো আমরা জানব, এর আগে আমরা লিভার সম্পর্কে জেনে নিই। লিভার আমাদের হিট পিণ্ড, ব্রেইন, ফুসফুস, আর কিডনির মতোই আমাদের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ অর্গানিসের মধ্যে একটি। এটি আমাদের পেটের উপরের জায়গাটিতে থাকে।
লিভার মানুষের শরীরের সবথেকে বড় গ্ল্যান্ড। যেমন, ঘরে লাগানো ওয়াটার ফিল্টার জলের নোংরা কে দূর করে আমাদের শুদ্ধ জল দেয়। ঠিক এইভাবে আমাদের লিভার শরীর থেকে সব নোংরা আর বিষাক্ত পদার্থকে ফিল্টার করে আমাদের রক্তকে পরিষ্কার করে শরীর স্বাস্থ্যবান বানিয়ে রাখার কাজ করে। শুধুমাত্র তাই নয় শরীরের অনেক ধরনের কাজ আছে যা পুরোপুরিভাবে লিভারের উপর ডিপেন্ড করে।
তাতে আপনার চোট লাগলে ঘাকে ঠিক করা হোক বা শরীরে হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখা হোক এই সব কিছুই কোনো না কোনোভাবে নির্ধারণ করে লিভার। এবার তো আপনি বুঝে গেছেন যে লিভার কতটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়। এজন্য লিভারের নিরাপত্তা বজায় রাখা আমাদের সবথেকে প্রথম কর্তব্য।
লিভার খারাপ হওয়ার লক্ষণ
লিভারের সমস্যার বিভিন্ন লক্ষণ ও উপসর্গকে স্পষ্ট ও সংক্ষিপ্তভাবে বুঝতে সাহায্য করার জন্য বিস্তারিত আলোচনা। এটা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে আপনি যদি এই উপসর্গগুলির মধ্যে কোনটি অনুভব করেন তবে অবিলম্বে চিকিত্সার পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
উপসর্গ | ব্যাখ্যা |
ত্বক ও চোখ হলুদ হয়ে যাওয়া | ঘটে যখন লাল রক্তকণিকা বিলিরুবিন নামক একটি হলুদ পদার্থের অত্যধিক উত্পাদন করে, যা লিভার সঠিকভাবে কাজ না করলে পরিষ্কার করা যায় না। এতে শরীরে বিলিরুবিন জমতে পারে। |
ত্বকে চুলকানি | দীর্ঘস্থায়ী লিভারের সমস্যাযুক্ত লোকেরা ফুসকুড়ি ছাড়াই ত্বকে চুলকানি অনুভব করতে পারে। এটি ঘুমের উপরও প্রভাব ফেলতে পারে এবং ওষুধের সাহায্যে হ্রাস করা যেতে পারে। |
পেট ফোলা | লিভারে রক্ত চলাচলে বাধা দিলে এর চারপাশের রক্তনালীতে চাপ বেড়ে যায়। যা পেট থেকে তরল নিষ্কাশন করে এবং সংগ্রহ করে, যার ফলে পেট বড় হয়। |
পা ও গোড়ালি ফুলে যাওয়া | লিভারের সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে তরল জমা হওয়া সাধারণ ব্যাপার। কম লবণ গ্রহণ এবং ওষুধ এই সমস্যা কমাতে সাহায্য করতে পারে। |
গাঢ় রঙের প্রস্রাব এবং ফ্যাকাশে মল | লিভারের সমস্যা হলে মলের রঙ বাদামী হয়ে যেতে পারে, অন্যদিকে জন্ডিস খারাপ হওয়ার কারণে ফ্যাকাশে মল হতে পারে। অতিরিক্ত বিলিরুবিন ত্বক এবং প্রস্রাবকেও কালো করতে পারে। |
দীর্ঘস্থায়ী ক্লান্তি | শরীরে টক্সিন জমা হওয়ার কারণে এটি মস্তিষ্কের উপরও ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। এর ফলে স্মৃতির সমস্যা এবং ভুলে যাওয়া হতে পারে। |
পেট খারাপ | লিভারের রোগে শরীরে টক্সিনের মাত্রা বেড়ে গেলে বমি বমি ভাব, বমি ও পেট খারাপ হতে পারে। লিভার ফেইলিউরের ক্ষেত্রে, বমি বা মলে রক্তও হতে পারে। |
ক্ষত এবং নাক দিয়ে রক্ত পড়া | লিভারের ব্যর্থতার কারণে শরীরের বিভিন্ন অংশে ক্ষত তৈরি হতে পারে। নাক দিয়ে রক্ত পড়াও হতে পারে এবং রক্ত জমাট বাঁধা সাধারণ ব্যাপার। |
মাকড়সার মতো রক্তনালী | আপনি যদি লাল মাকড়সার মতো শিরাগুলি ত্বকের নীচে, বিশেষত গাল, নাক এবং ঘাড়ে বা হাতের তালুতে উপস্থিত হতে দেখেন তবে এটি একটি গুরুতর লিভার সমস্যার লক্ষণ হতে পারে। |
সংক্ষেপে, লিভার একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ যা শরীরের অনেকগুলি কার্য সম্পাদন করে। যাইহোক, যখন লিভার সঠিকভাবে কাজ করে না, তখন এটি বিভিন্ন উপসর্গের কারণ হতে পারে যা উদ্বেগজনক হতে পারে। এই লক্ষণগুলি সম্পর্কে সচেতন হওয়া এবং আপনি যদি এগুলির কোনওটি অনুভব করেন তবে অবিলম্বে চিকিত্সার পরামর্শ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
লিভার খারাপ হওয়ার প্রধান আট টি লক্ষণ
সংক্ষেপে লিভার খারাপ হওয়ার লক্ষণ জানুন। প্রধান আট টি লিভার খারাপ হওয়ার লক্ষণ।
১। পেট খারাপ থাকা, বারবার গ্যাস আসা, টক ঢেকুর আসা, খাবার ঠিকমতো হজম না হওয়া, বমি-বমি ভাব মনে হয়।
২। সব সময় শরীরে ক্লান্তভাব
৩। লিভারে টক্সিনের মাত্রা বেড়ে যাওয়া
৪। মুখে দুর্গন্ধ
৫। মূত্রের রং হলুদ
৬। স্কিনে লাল দাগ
৭। ওজন কমে যাওয়া
৮। শরীরে রক্ত জমা
আরো পড়ুনঃ |
লিভার খারাপ হওয়ার লক্ষণ বিস্তারিত
বিস্তারিত ভাবে লিভার খারাপ হওয়ার লক্ষণ জানুন। প্রধান আট টি লিভার খারাপ হওয়ার লক্ষণ। যা জেনে আপনি অল্লতেই ভালো হয়ে জেতে পারেন।
১। পেট খারাপ থাকা, বারবার গ্যাস আসা, টক ঢেকুর আসা, খাবার ঠিকমতো হজম না হওয়া, বমি-বমি ভাব মনে হয়।
বিস্তারিতঃ লিভার খারাপ হওয়ার লক্ষণ সব থেকে শুরুর দিকের লক্ষণ হলো এটি। আমাদের লিভারের খারাপ হওয়ার মাত্রা বেড়ে গেলে আপনি যদি কোন উল্টাপাল্টা জিনিস খান তাহলে আমাদের পেটে অবস্থা অনেক বেশি খারাপ হয়ে যায় এ কারণে আমাদের পেট খারাপ থাকে। আবার কখনও কখনো মাথা ব্যাথারও সম্মখিন হতে হয়।
যখন লিভার খারাপ হয় তখন কাজ করার ক্ষমতা ও গতি কম হয়ে যায় আর যেটার কারনে আমাদের মেটাবলিজম অনেক ধিমো হয়ে যায়,
অনেক স্লো হয়ে যায়।
এই কারণে আমাদের পেটে খাবার হজম করার খুবই সমস্যা হতে থাকে। এজন্য যদি আপনার পেট পরিষ্কার না হয় বা যদি আপনি পেট থেকে জড়িত লাগাতার সমস্যায় ভুগেন, তাহলে এর কানেকশন লিভার থেকে হতে পারে।
এই জন্য যাদের বারবার পেট থেকে জড়িত প্রবলেম হয় তারা অবশ্যই একবার লিভার টেস্ট করাবেন। আর এটা আমরা তখনই জানতে পারি যখন আমাদের কোন রোগ ধরা পড়ে যায়।
তাই সময় সময় বডি অবশ্য চেকাউপ করাবেন। আজকালের জীবন-যাপনের নিয়মিত চেকআপ করা অনেক জরুরী হয়ে গেছে। আর ডাক্তারাও বলে প্রত্যেক ছয় মাস পর পর আপনাকে অবশ্যই ফুল বডি চেকআপ করানো উচিত।
২। সব সময় শরীরে ক্লান্তভাব
বিস্তারিতঃ এমনিতে তো এই ব্যস্ততা ভরা জীবন যাপনের ক্লান্তভাব কোন বড় ব্যাপার নয়। কিন্তু যখন আমাদের লিভার খারাপ হতে শুরু হয়ে যায়, তো শুরুর দিকে আমাদের অধিক ক্লান্ত আর অলস আসে। যদিও এই জিনিস আপনার সাথে কখনো সখনো হয়ে থাকে তাহলে ঠিক আছে। কিন্তু যদি আপনার সাথে প্রতিদিন ক্লান্তি আর ওর সাথে সাথে দুর্বলতার সাথে লড়াই করছেন এর সংযোগ আমাদের লিভার থেকে হতে পারে।
৩। লিভারে টক্সিনের মাত্রা বেড়ে যাওয়া
বিস্তারিতঃ লিভারে টক্সিনের মাত্রা বাড়ার কারণে ওর কাজ করার ক্ষমতা দুর্বল হতে থাকে। এটাই কারণ যে শরীরে থাকা দ্বিতীয় অসংখ্য অঙ্গ কে বেশি কাজ করতে হয়। আর এই কন্ডিশনে আমাদের শরীর দ্রুত দুর্বল অনুভব করে। আর এটিকে আরাম করারও দরকার পড়ে। আর যদি কোন ব্যক্তির লাগাতার দুই মাসের বেশি সময় থেকে দুর্বলতা অনুভব হচ্ছে তাহলে একবার তার লিভার টেস্ট করে নেয়া উচিত।
যখন আমাদের লিভারে বিষাক্ত পদার্থের মাত্রা বেড়ে যায় ওতে অনেক লোড করতে থাকে। আর তারপর লিভারে থাকার টক্সিনস শরীরের ফ্যাট জমা হতে থাকে। যার কারণে শরীরের চর্বি বাড়তে থাকে আর তখন লিভারের খারাপের কারনে পেট দিন দিন বাইরে চলতে থাকে। এমন অবস্থায় ওজন কমানো অনেক মুশকিল হয়ে যায়। এই কন্ডিশনে আপনার লিভারের চেকআপ অবশ্যই করা উচিত।
৪। মুখে দুর্গন্ধ
বিস্তারিতঃ এমনিতে তো অনেক খাবারের জিনিস আর বাজে অভ্যাসের কারণে মুখে দুর্গন্ধ আছে। কিন্তু অনেক রকম কন্ডিশনে মুখ থেকে আসার দুর্গন্ধের পেছনে লিভারের কারণেও হতে পারে।
আসলে আমাদের লিভার আর পেটের সমস্যা সাথে সাথে চলে এজন্য লিভার খারাপ হলে পেট ও খারাপ হওয়া স্বাভাবিক। আর যখন পেট খারাপ হয় তখন আমাদের নিঃশ্বাস থেকে দুর্গন্ধ হতে থাকে। যেটা লিভারের যেকোনো ধরনের প্রবলেম এর শুরুর দিকের লক্ষণ এটি।
যখন আমাদের লিভার খারাপ হচ্ছে ,আর আমরা বুঝতে পারি না, আর আমরা এটিকে অবহেলা করি। তো আমাদের লিভার নিজে থেকে এসে তাকে ঠিক করার চেষ্টা করে। এবার এই কন্ডিশনে যখন দ্বিতীয় কাজের সাথে সাথে লিভারকে নিজেকে নিজে ঠিক করতে হয় এর ফলে এটি আরো দুর্বল হতে থাকে।
যখন নিজে নিজে লিভার কাজ করে তখন শরীরের ব্লাড প্রেসার বেড়ে যায় আর তখন বাডিতে থাকা ব্রাডম্যানের রক্ত শরীরের নিচে জায়গায় জমা হতে থাকে। যেটার কারণে আপনার পা ফুলতে থাকে আর যদি আপনার সাথে এমন কিছু হচ্ছে তাহলে আপনার দ্রুত লিভারের চেকআপ করে নিন।
৫। মূত্রের রং হলুদ
বিস্তারিতঃ কখনো যখন আমাদের নখের রং হলুদ হয়ে যায়। তো আমরা এটিকে জন্ডিস বা প্লীহা লক্ষণ বলে থাকি। কিন্তু আমি আপনাকে বলে দিই প্লীহা লিভার খারাপ হলেই হয়। আসলে দুর্বল লিভার শরীরে বিলিরুবিন এর মা তাকে বাড়িয়ে দেয়। এটি আমাদের শরীরে পাওয়া যাওয়া একটি হলুদ পদার্থ হয়। আর যখন খারাপ লিভারের দরুন শরীরে বিলিরুবিন এর মাত্রা বেড়ে যাবে তখন এটি আমাদের শরীর, চোখ আর ত্বকেও হলদেটে ভাব উৎপন্ন করতে থাকে। বেড়ে যাওয়া বিলুরুবিন কম করার জন্য, আমাদের লিভারের ওটিকে মুত্রের সাহায্যে বাইরে বের করে দেয়। যে কারণে মূত্রের রং হলুদ দেখতে পাবেন আপনি।
৬। স্কিনে লাল দাগ
বিস্তারিতঃ এমনিতে তো স্কিনে হওয়া এলার্জি অধিকতর ভাবে ইনফেকশন আর ব্যাকটেরিয়ার কারনে হয়। কিন্তু অনেকবার ত্বকে হওয়া চুলকানি আর লাল দাগ এর পেছনে খারাপ লিভারের কারণও হতে পারে। যখন আমাদের লিভারে বিষাক্ত পদার্থের মাত্রা বেড়ে যায় এর প্রভাব আমাদের ত্বকেও হতে থাকে। আমাদের স্কিন অধিক সেনসিটিভ হয়ে যায়, আর আলাদা আলাদা জায়গায় লাল দাগ নজর আসতে থাকে।
৭। ওজন কমে যাওয়া
বিস্তারিতঃ শরীর থেকে জড়িত অনেক প্রবলেমে খিদে লাগা অনেক কম হয়ে যায়। আর লিভারের খারাপ হওয়া ওর মধ্যে একটি। যখন আমাদের লিভার ঠিক ভাবে কাজ না করে ওর সব প্রভাব আমাদের ডাইজেস্টিভ সিস্টেম এ পড়ে। খাবার ঠিকভাবে না হজম হওয়ার কারণে দিনে দিনে খিদে লাগা সমাপ্ত হয়ে যায়। এর ফলে শরীরের ওজন কমে যাই।
৮। শরীরে রক্ত জমা
বিস্তারিতঃ বেশিরভাগ রক্ত তখন জমে যখন আমাদের কোন চোট আছে। কিন্তু যদি আপনি আপি রক্ত জমে যাচ্ছে বা হালকা চটে ওর দাগ একটু বেশি দেখা দিচ্ছে, তো জেনে নিন আপনার জীবনে প্রবলেম রয়েছে।
তো বন্ধুরা এটি ছিল লিভার খারাপ হওয়ার লক্ষণ। যদি আপনার সামনে আসে তাহলে দ্রুত আপনার চেকআপ করান। এর পরের পোস্টে আমরা জানব লিভার সমস্যা দূর করার উপায়। সাম্প্রতি আমরা প্রকাশ করেছি গ্যাস্ট্রিক হলে কি কি সমস্যা হয়।