ধ্বনি কাকে বলে

মানুষের সঙ্গে মানুষের ভাব বিনিময়ের জন্য যেসব অর্থ যুক্ত শব্দ বাগযন্ত্রের সাহায্যে উচ্চারণ করা হয় সেইসব শব্দের ক্ষুদ্রতম অংশকে বলা হয় ধ্বনি। ভাষার ক্ষুদ্রতম একক হল ধ্বনি। যেমন- কলা শব্দটি ভাঙালে ( ক+অ+ল+আ) ক,অ,ল,আ এই ধ্বনিগুলো পাই।এরপর আর এগুলোকে ভাঙা যায় না।

মানুষের ‘কথা’ হলো অর্থযুক্ত কিছু ধ্বনি। ব্যাকরণ শাস্ত্রে মানুষের কণ্ঠনিঃসৃত শব্দ বা আওয়াজকেই ধ্বনি বলা হয়।

ধ্বনি কত প্রকার ও কি কি :-

‘ধ্বনি’র সাধারণ অর্থ যেকোনো ধরনের আওয়াজ’। কিন্তু ব্যাকরণ ও ভাষাতত্ত্বের পারিভাষিক অর্থে মানুষের বাগ্যন্ত্রের সাহায্যে তৈরি আওয়াজকে ধ্বনি বলে। আর এই ধ্বনি দু-প্রকার যথা –

  1. স্বরধ্বনি ও
  2. ব্যঞ্জনধ্বনি

 

স্বরধ্বনি কি বা কাকে বলে :-

যে সব ধ্বনি উচ্চারণের সময় ফুসফুস থেকে বাতাস বেরিয়ে যেতে মুখবিবরের কোথাও কোনো রকম বাধা পায় না, সেই সব ধ্বনিকে বলা হয় স্বরধ্বনি।

যে ধ্বনি উচ্চারণের সময় মুখের ভেতরে কোথাও বাধা পায় না এবং যা অন্য ধ্বনির সাহায্য ছাড়া নিজেই সম্পর্ণভাবে উচ্চারিত হয় তাকে স্বরধ্বনি বলে।

ব্যঞ্জনধ্বনি কি বা কাকে বলে :-

যে সকল ধ্বনি উচ্চারণের সময় ফুসফুস থেকে বাতাস বেরিয়ে যেতে মুখবিবরের কোথাও না কোথাও কোনো প্রকার বাধা পায় কিংবা ঘর্ষণ লাগে, সেই সব ধ্বনিকে ব্যঞ্জনধ্বনি বলে।

যে ধ্বনি উচ্চারণের সময় মুখের ভেতরে কোথাও না কোথাও বাধা পায় এবং যা স্বরধ্বনির সাহায্য ছাড়া স্পষ্টরূপে উচ্চারিত হতে পারে না তাকে ব্যঞ্জনধ্বনি বলে।

যেমন- ক (ক+অ), চ (চ+অ), ট, ত প ইত্যাদি। ব্যঞ্জনধ্বনির সংখ্যা ৩২টি।

বিভিন্ন ধরনের স্বরবর্ণের সংজ্ঞা:-
সংক্ষিপ্ত স্বরবর্ণ কাকে বলে:-

যেসব স্বরধ্বনি উচ্চারণে কম সময় নেয় তাদেরকে স্বরবর্ণ বলে। যেমন – অ, ই, উ, ঋ।

দীর্ঘ স্বরবর্ণ কাকে বলে:-

যে স্বরধ্বনি উচ্চারণে একটু বেশি সময় নেয় তাকে দীর্ঘ স্বরবর্ণ বলে। যেমন- ক, ণ, ণ, অ।

মৌলিক স্বরধ্বনি কাকে বলে:-

যেসব ধ্বনি বিশ্লেষণ করা যায় না তাকে মৌলিক স্বরধ্বনি বলে।

এদের সংখ্যা সাত টি যথা- অ, আ, ই, উ, এ, ও অ্য।

যৌগিক স্বরধ্বনি কাকে বলে:-

যে ধ্বনিগুলোকে বিশ্লেষণ করা যায় তাকে যৌগিক স্বরধ্বনি বলে।

যেমন- ঐ (অ+ই), ঔ (অ+উ)। তাই যৌগিক স্বরকে আবার সন্ধ্যাক্ষর, যৌগিক স্বর বা ডিপথং বলা হয়।

সম্মুখ বা বর্ধিত স্বরধ্বনিকে বলা হয়:-

যেসব স্বরধ্বনি উচ্চারণের সময় জিহ্বা এগিয়ে যায় তাদেরকে সম্মুখ স্বর বা বর্ধিত স্বর বলা হয়। যেমন, ই, এ, এ.

ব্যাক স্বরবর্ণ কাকে বলে:-

যেসব স্বরধ্বনি উচ্চারণের সময় জিহ্বা পিছনে সরে যায়, তাকে ব্যাক স্প্লিট স্বর বলে। যেমন- উ, ও, আ।

কুঞ্চিত স্বর কাকে বলে :-

যেসব স্বরধ্বনি উচ্চারণের সময় ঠোঁট কুঁচকে যায় তাকে কুঞ্চিত স্বর বলে। যেমন- অ, উ, ও।

এমবেডেড স্বরবর্ণ কাকে বলে:-

যেসব স্বরধ্বনি উচ্চারণের সময় সবচেয়ে কম প্রসারিত ও খোলা থাকে তাদের বন্ধ স্বরধ্বনি বলে। উদাহরণস্বরূপ, ই, ইউ।

উচ্চারিত স্বরবর্ণ কাকে বলে:-

যেসব স্বরধ্বনি উচ্চারণের সময় মুখ সম্পূর্ণরূপে প্রসারিত হয় তাকে উচ্চারিত স্বর বলা হয়। যেমন

ভোকালাইজেশন কি:-

যে সমস্ত ধ্বনি উচ্চারণের স্থান কণ্ঠনালীর পৃষ্ঠ বা জিহ্বার মূল তাদের ভোকাল কর্ড বলে। যেমন- ক, ক.

পারকাশন কি :-

যে সকল ধ্বনি উচ্চারণের স্থান তালুকে তালব্য ধ্বনি বলে। যেমন- ই, ই, ব্যঞ্জনবর্ণ।

ওষ্ঠ্যধ্বনি :-

যে সমস্ত ধ্বনির উচ্চারণ স্থান ওষ্ঠ, তাদের ওষ্ঠ্যধ্বনি বলে। যেমন:- উ, ঊ, ।.

কণ্ঠ্যতালব্যধ্বনি :-

যে সকল ধ্বনি উচ্চারণের স্থান কণ্ঠ ও তালু উভয়ই হয় তাদেরকে তালুকীয় ধ্বনি বলে। যেমন- এ, ঐ কণ্ঠ্যতালব্য ধ্বনি।।

কণ্ঠৌষ্ঠ্যধ্বনি :-
-যে সমস্ত ধ্বনির উচ্চারণ স্থান কণ্ঠ ও ওষ্ঠ, তাদের কণ্ঠৌষ্ঠ্য ধ্বনি বলে।  যেমন- ও, ঔ কণ্ঠৌষ্ঠ্য ধ্বনি।

মুর্ধানা ধ্বনি:-

যে সকল ধ্বনি উচ্চারণের স্থান মুখ বা তালুকে মূর্ধন্য ধ্বনি বলে। যেমন – ঋ।

You cannot copy content of this page