বদ্ধ অর্থনীতি কি, বৈশিষ্ট্য, সুবিধা, অসুবিধা

বদ্ধ অর্থনীতি কি – বদ্ধ অর্থনীতি বলতে বোঝাই একটি দেশের অর্থনীতির সাথে অন্য একটি দেশের অর্থনীতির সাথে কোন সম্পর্ক না থাকা। অর্থাৎ একটি দেশের অর্থনীতির সাথে অন্য একটি দেশের অর্থনীতির কোন ব্যবসায়িক কার্যকলাপ না থাকা।

বদ্ধ অর্থনীতি কি

বদ্ধ অর্থনীতি সাধারনত একটি নির্দিষ্ট দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। তাই বদ্ধ অর্থনীতি সম্পূর্ণরূপে স্বয়ংসম্পূর্ণ। এর অর্থ হল, একটি দেশের অর্থনীতি আমদানি বা রপ্তানি করা হয় না।

দেশীয় ভোক্তাদের দেশের সীমানার মধ্যে থেকে তাদের প্রয়োজনীয় সমস্ত কিছু সরবরাহ করা হলো একটি বদ্ধ অর্থনীতির লক্ষ্য ।

অন্যত্র উৎপাদিত কাঁচামালের প্রয়োজনীয়তা যা চূড়ান্ত পণ্যের ইনপুট হিসাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে তা বদ্ধ অর্থনীতিকে অদক্ষ করে তোলে।

আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা থেকে একটি সরকার নির্দিষ্ট শিল্প বন্ধ করতে পারে,  কোটা, ভর্তুকি এবং শুল্ক ব্যবহারের মাধ্যমে এই বদ্ধ অর্থনীতির মাধ্যমে । তবে  বাস্তবে, এমন কোনো দেশ নেই  যার অর্থনীতি সম্পূর্ণভাবে বদ্ধ।

বদ্ধ অর্থনীতির বৈশিষ্ট্যগুলি নিম্নরূপ:

ক) দেশে কোন আমদানি বা রপ্তানি নেইঃ একটি দেশের অর্থনীতি সম্পূর্ণরূপে স্বয়ংসম্পূর্ণ। এর অর্থ হল দেশে কোনো পণ্য, সেবা বা মূলধন অন্য দেশের সাথে লেনদেন করা হয় না। এই ধরনের অর্থনীতিকে “বদ্ধ অর্থনীতি” বলা হয়।

একটি বদ্ধ অর্থনীতির জন্য, দেশের সমস্ত চাহিদা দেশীয় উৎপাদনের দ্বারা পূরণ করতে হবে। এর মানে হল যে দেশে সমস্ত প্রয়োজনীয় পণ্য এবং পরিষেবাগুলি উৎপাদিত হতে হবে। এটি একটি চ্যালেঞ্জিং কাজ হতে পারে, বিশেষ করে এমন ক্ষেত্রে যেখানে দেশটিতে নির্দিষ্ট পণ্য বা পরিষেবাগুলির উৎপাদন করার জন্য প্রয়োজনীয় প্রাকৃতিক সম্পদ বা প্রযুক্তি নেই।

বাস্তব জগতে, সম্পূর্ণরূপে বদ্ধ অর্থনীতি অসম্ভব। সমস্ত দেশই অন্য দেশগুলির সাথে কিছু স্তরের বাণিজ্য এবং বিনিয়োগে জড়িত থাকে। তবে, কিছু দেশ, যেমন উত্তর কোরিয়া, তাদের অর্থনীতিকে অন্যান্য দেশগুলির সাথে বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে সীমাবদ্ধ করে।

খ) দেশের অর্থনীতি বাইরের বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্নঃ দেশের অর্থনীতি বাইরের বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন বলতে বুঝায় যে দেশের অর্থনীতি অন্যান্য দেশের অর্থনীতির সাথে কোনও যোগাযোগ বা সম্পর্ক নেই। এর অর্থ হল দেশটি অন্যান্য দেশগুলির সাথে কোনও পণ্য, সেবা বা মূলধনের বাণিজ্য বা বিনিয়োগে জড়িত নয়।

একটি দেশের অর্থনীতি বাইরের বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার অনেকগুলি কারণ থাকতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে:

ভৌগোলিক অবস্থান: একটি দেশ যদি অন্য দেশগুলি থেকে ভৌগোলিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়, তাহলে সে দেশ অন্য দেশগুলির সাথে বাণিজ্য বা বিনিয়োগ করা কঠিন হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, উত্তর কোরিয়া একটি বদ্ধ অর্থনীতি, কারণ এটি অন্যান্য দেশগুলি থেকে ভৌগোলিকভাবে বিচ্ছিন্ন।

রাজনৈতিক পরিস্থিতি: একটি দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিও তার অর্থনীতিকে বাইরের বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ইরান একটি বদ্ধ অর্থনীতি, কারণ এর সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

অর্থনৈতিক অবস্থান: একটি দেশের অর্থনৈতিক অবস্থাও তার অর্থনীতিকে বাইরের বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, শিল্পোন্নত দেশগুলি সাধারণত উন্নতিশীল দেশগুলির তুলনায় উন্মুক্ত অর্থনীতি থাকে।

গ) দেশীয় উৎপাদন দেশীয় চাহিদা পূরণের জন্য যথেষ্ট।

ঘ) সরকার বাণিজ্য বা বিনিয়োগের উপর কোনও নিয়ন্ত্রণ বা বাধা আরোপ করে না।

বদ্ধ অর্থনীতির সুবিধাগুলি নিম্নরূপ:

  • এটি দেশের স্বায়ত্তশাসন বাড়ায়।
  • এটি দেশের অর্থনীতিকে বাইরের বিশ্বের অস্থিরতা থেকে রক্ষা করে।
  • এটি দেশীয় শিল্পগুলিকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।

বদ্ধ অর্থনীতির অসুবিধাগুলি নিম্নরূপ:

  • এটি দেশের জন্য আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের সুবিধাগুলি থেকে বঞ্চিত করে।
  • এটি দেশীয় পণ্যগুলির জন্য প্রতিযোগিতা কমিয়ে দেয়।
  • এটি দেশীয় উৎপাদনকে অদক্ষ করে তুলতে পারে।

Leave a Comment

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Prove your humanity: 10   +   8   =  

You cannot copy content of this page

Scroll to Top