কখন মানুষের বিবেক কাজ করে না? আবেগ কাজ করে?

তখন আমার আবেকে কাজ করছে, বিবেক কাজ করে নাই? বিবেক যদি কাজ করত তাহলে আমি এত বড় পাপের মধ্যে জড়িয়ে যেতাম না। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় আদালত হলো বিবেক। কিছু দিন আগে এই কথাটি অনেকে শুনেছিল, এর ধারাবাহিকতাই আজকের এই প্রবন্ধটি যে, কখন মানুষের বিবেক কাজ করে না? আবেগ কাজ করে?। 

মানুষের বিবেক তখনই কাজ করে না যখন সে প্রবল আবেগ দ্বারা তাড়িত হয়। আবেগ হলো মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ। এটি ভালো-মন্দ, উচিত-অনুচিতের বিচার করে না। তাই যখন মানুষ প্রবল আবেগ দ্বারা তাড়িত হয়, তখন সে তার বিবেকের কথা মনে রাখতে পারে না এবং এর ফলে মানুষ ভুল সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

মানুষের বিবেক ও আবেগ দুটিই গুরুত্বপূর্ণ মানসিক প্রক্রিয়া। বিবেক হলো ভালো-মন্দ, উচিত-অনুচিতের বিচার করার ক্ষমতা রাখে। এবং আবেগ হলো মানব মনের স্বতঃস্ফূর্ত অনুভূতি, যেমন আনন্দ, দুঃখ, রাগ, ভয় ইত্যাদি প্রকাশ করে।

বিবেক ও আবেগ দুটিই মানব আচরণের উপর প্রভাব ফেলে। তবে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিবেক ও আবেগের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দিতে পারে। যেমন, কেউ যখন খুব রাগান্বিত হয়, তখন সে এমন কিছু বলে বা করে ফেলতে পারে যা সে সাধারণত করে না, বা ভাবতেও পারে না। এই ক্ষেত্রে, বিবেক আবেগের কাছে পরাজিত হয়।

মানুষের বিবেক কাজ না করার কয়েকটি কারণ হলো:

  • অতিরিক্ত আবেগ: যখন মানুষ অতিরিক্ত আবেগ দ্বারা তাড়িত হয়, তখন সে তার বিবেকের কথা মনে রাখতে পারে না। যেমন, কেউ যখন খুব রাগান্বিত হয়, তখন সে এমন কিছু বলে বা করে ফেলতে পারে যা সে সাধারণত সে পূর্বে করে নি।
  • অজ্ঞতা: যখন মানুষ কোনো বিষয়ে সঠিক জ্ঞান রাখে না, তখন সে ভুল সিদ্ধান্ত নিতে পারে। যেমন, কেউ যখন কোনো বিষয়ে সঠিক তথ্য না জেনে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়, তখন সে তার বিবেকের কথা মনে রাখতে পারে না।
  • প্রভাব: যখন মানুষ অন্যদের দ্বারা প্রভাবিত হয়, তখন সে তার বিবেকের কথা মনে রাখতে পারে না। যেমন, কেউ যখন তার বন্ধুদের দ্বারা প্রভাবিত হয়, তখন সে এমন কিছু করে ফেলতে পারে যা সে সাধারণত করে না।

অন্যদিকে, আবেগ সব সময় খারাপ নয়। আবেগ মানুষের জীবনকে আরও সুন্দর করে তোলে। তবে, আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন। আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে তা মানুষের ক্ষতি করতে পারে।

মানুষের বিবেক ও আবেগ দুটিই গুরুত্বপূর্ণ। বিবেক মানুষের ভালো-মন্দের বিচার করে, আর আবেগ মানুষের জীবনকে আরও সুন্দর করে তোলে। তাই, এই দুটিকে ভারসাম্যপূর্ণভাবে ব্যবহার করা উচিত।

বিবেক ও আবেগ ডাক্তারি ভাষায়

ডাক্তারি ভাষায়, বিবেক ও আবেগের মধ্যকার সম্পর্ককে নিম্নরূপ ব্যাখ্যা করা যেতে পারে:

  • বিবেক হলো একটি মানসিক প্রক্রিয়া যা ভালো-মন্দ, উচিত-অনুচিতের বিচার করে। এটি মস্তিষ্কের প্রোন্টাল কর্টেক্সে অবস্থিত। প্রোন্টাল কর্টেক্স হলো মস্তিষ্কের সেই অংশ যা যুক্তি, বিচার ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য কাজ করে।
  • আবেগ হলো মানব মনের স্বতঃস্ফূর্ত অনুভূতি। এটি মস্তিষ্কের লিম্বিক সিস্টেমে অবস্থিত। লিম্বিক সিস্টেম হলো মস্তিষ্কের সেই অংশ যা আবেগ, স্মৃতি ও পুরস্কার-শাস্তির জন্য  কাজ করে থাকে।

বিবেক ও আবেগের মধ্যে দ্বন্দ্ব

বিবেক ও আবেগের মধ্যে দ্বন্দ্ব তখনই দেখা দিতে পারে যখন আবেগ খুব বেশি মাত্রায় থাকে। এই ক্ষেত্রে, আবেগ বিবেককে আচ্ছন্ন করে দিতে পারে এবং মানুষ ভুল সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

বিবেক ও আবেগ দুটিই মানব আচরণের উপর প্রভাব ফেলে। তবে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিবেক ও আবেগের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দিতে পারে। যেমন, কেউ যখন খুব রাগান্বিত হয়, তখন সে এমন কিছু বলে বা করে ফেলতে পারে যা সে সাধারণত করে না। এই ক্ষেত্রে, বিবেক আবেগের কাছে পরাজিত হয়।

বিবেক ও আবেগের মধ্যে দ্বন্দ্বের কারণ

বিবেক ও আবেগের মধ্যে দ্বন্দ্বের কারণগুলি নিম্নরূপ:

  • আবেগের তীব্রতা: যখন আবেগ খুব বেশি মাত্রায় থাকে, তখন তা বিবেককে আচ্ছন্ন করে দিতে পারে।
  • জ্ঞানের অভাব: যখন মানুষ কোনো বিষয়ে সঠিক জ্ঞান রাখে না, তখন সে ভুল সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
  • প্রভাব: যখন মানুষ অন্যদের দ্বারা প্রভাবিত হয়, তখন সে তার বিবেকের কথা মনে রাখতে পারে না।

বিবেক ও আবেগের মধ্যে দ্বন্দ্বের ফলাফল

বিবেক ও আবেগের মধ্যে দ্বন্দ্বের ফলে মানুষ ভুল সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এই ভুল সিদ্ধান্তের ফলে মানুষের জীবনে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। যেমন, কেউ যখন খুব রাগান্বিত অবস্থায় কোনো সিদ্ধান্ত নেয়, তখন সে এমন কিছু করে ফেলতে পারে যা তার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

  • কোনো ব্যক্তি যখন তার প্রিয়জনের সাথে ঝগড়া করে, তখন সে তার বিবেকের কথা মনে রাখে, কিন্তু রাগের কারণে সে এমন কিছু বলে বা করে ফেলে যা তার প্রিয়জনের সাথে তার সম্পর্ক নষ্ট করে দিতে পারে।
  • কোনো ব্যক্তি যখন কোনো অন্যায়ের শিকার হয়, তখন সে তার বিবেকের কথা মনে রাখে, কিন্তু প্রতিশোধের আবেগের তাড়নায় সে এমন কিছু করে ফেলে যা তার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

বিবেক ও আবেগের মধ্যে ভারসাম্য

বিবেক ও আবেগের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা জরুরি। বিবেককে কঠোর করে আবেগকে দমন করা উচিত নয়। আবার, আবেগকে খুব বেশি মাত্রায় প্রকাশ করাও উচিত নয়। বিবেক ও আবেগের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখলে মানুষ সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে এবং ভালো আচরণ করতে পারে।

বিবেক ও আবেগের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার উপায়

বিবেক ও আবেগের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি গ্রহণ করা যেতে পারে:

  • নিজের আবেগ সম্পর্কে সচেতন হওয়া।
  • আবেগের প্রভাব বোঝা।
  • আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করার কৌশল শিখতে হবে।
  • বিবেকের কথা মনে রাখা।
  • সঠিক তথ্য ও জ্ঞান অর্জন করা।
  • সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য সময় নেওয়া।

উপসংহার

বিবেক ও আবেগ দুটিই গুরুত্বপূর্ণ মানসিক প্রক্রিয়া। এই দুটিকে ভারসাম্যপূর্ণভাবে ব্যবহার করা উচিত। বিবেক ও আবেগের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখলে মানুষ সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে এবং ভালো আচরণ করতে পারে।

মন্তব্য করুন

You cannot copy content of this page