শ্রমের মর্যাদা রচনা, ১২, ২৫ পয়েন্ট, ২০ প্যারা, ক্লাস ৭, ১০

আজকের প্রবন্ধের মূল বিষয় সকল শিক্ষার্থীদের জন্য শ্রমের মর্যাদা রচনা, ১২ পয়েন্ট, ২৫ পয়েন্ট, ২০ প্যারা, class 7, ক্লাস ১০ সহজভাবে আলোচনা করা।

সুতরাং যে সকল শিক্ষার্থী শ্রমের মর্যাদা রচনা করছে তাদের জন্য এই পোস্টটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে। সকল শিক্ষার্থীরা খুব সহজেই শ্রমের মর্যাদা রচনাটি ব্যবহার করতে পারবে।

শ্রমের মর্যাদা রচনাটি সহজ ভাবে আলোচনা করা হয়েছে যেন সকল শ্রেণী শিক্ষার্থীরা ব্যবহার করতে পারে। শ্রমের মর্যাদা রচনা সহজ পয়েন্ট এবং প্যারা গুলো তুলে ধরা হয়েছে।

শ্রমের মর্যাদা রচনাটি  class 7 এবং ক্লাস ১০ সহ সকল শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা মুখস্থ করতে পারবে। একটি পয়েন্ট ভালো না লাগলে অপরটি সহজ পয়েন্ট মুখস্ত করতে পারবে।

শ্রমের মর্যাদা রচনা

ভূমিকাঃ–  শ্রমের মর্যাদা হলো মানবজীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় । এই শ্রমের মর্যাদার শক্তিতেই মানুষ যুগযুগ ধরে গড়ে তুলেছে বিশাল মানবসভ্যতা। প্রথম শ্রমের মর্যাদার বহিঃ বিকাশ ঘটে নুড়ি পাথর দিয়ে, যেখানে আদিম যুগের মানুষ পাথরের নুড়ি দিয়ে শ্রমের সাহায্যে মানুষ তৈরি করেছিল প্রথম হাতিয়ার।

তারপর বহুকাল ধরে মানুষ তাদের শ্রম দিয়ে গড়ে তুলেছে সভ্যতার এক বিরাট সৌধ। মানুষ শ্রমের গুণে প্রাণীজগত থেকে নিজেকে আলাদা করেছে। মানুষ যে আধুনিক মেশিন চালায়, সূক্ষ্ম ছবি আঁকতে বা সুন্দর সুর তৈরি করে তার মূলে রয়েছে শ্রমের অবদান। বিশ্ব সভ্যতার প্রতিটি সৃষ্টির মূলে রয়েছে মানুষের অক্লান্ত পরিশ্রম। শ্রম সম্পর্কে বলতে গিয়ে আলবার্ট আইনস্টাইন বলেছিলেন-

A hard working street-cleaner is a better man than a lazy scholar.

শ্রমের প্রয়োজনীয়তাঃ– কথায় আছে, সফলতা কেবলমাত্র একজন ব্যক্তির জন্য সময়ের ব্যাপার, যে স্রষ্টার প্রতি বিশ্বাস রাখে, সততাকে পুঁজি করে এবং অক্লান্ত পরিশ্রম করে। বাবুই পাখিরা অক্লান্ত পরিশ্রমে একটু একটু করে শক্ত বাসা বুনে। ফলে তার বোনা বাসা হাজারো ঝড়ের মধ্যেও টিকে থাকে।

অন্যদিকে চড়ুইরা পরিশ্রমী নয় ফলে অন্যের দালানে বোনা বাসা মুহূর্তের মধ্যে ভেঙে পড়ে। জীবনকে যথাযথ মর্যাদায় প্রতিষ্ঠা করতে শ্রমের কোনো বিকল্প নেই। তাই, মানবজীবনকে একটি সুন্দর রূপ দিতে হলে শ্রমের গুরুত্ব অপরিসীম।

শ্রমের প্রকারভেদ : — গায়ে গতরে খাটা শ্রম আর মানসিক শ্রম— দুটোরই গুরুত্ব রয়েছে। আমাদের মানব সমাজে শ্রম দুই ভাগে বিভক্ত। যথা : কায়িক শ্রম এবং মানসিক শ্রম। যে শ্রমে দেহের হাত, পা এবং অন্যান্য অঙ্গ–প্রত্যঙ্গ চালনা করতে হয়, তাকে দৈহিক বা কায়িক শ্রম বলে। আর যে কাজে মস্তিষ্ক চালনা করতে হয়, তাকে মানসিক শ্রম বলে। দৈহিক শ্রম এবং মানসিক শ্রম একে অপরের পরিপূরক।

একটিকে বাদ দিয়ে অন্যটির কথা চিন্তা করা যায় না। একটি জাতিকে এগিয়ে নিতে হলে অবশ্যই দুধরনের সমন্বয় প্রয়োজন। কেননা কায়িক শ্রমকে প্রাধান্য না দিলে তৃণমূল পর্যায়ে দেশের ভিত্তি সুদৃঢ় করা সম্ভব নয়। অন্যদিকে মানসিক শ্রমকে প্রাধান্য না দিলে একটি দেশের তৃণমূল পর্যায়ের ভিত সুদৃঢ় থাকলেও প্রকৃতপক্ষে সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও নৈতিক মূল্যবোধকে সুদৃঢ় করা সম্ভব নয়। ফলে সে জাতির বা দেশের বিপর্যয় অনিবার্য। মোট কথা এ দুটি শ্রমের একটিকেও অবহেলা করলে কেউ উন্নতির শিখরে উপনীত হতে পারে না।

পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রতিশ্রুতিঃ– “আমি আমার অভিজ্ঞতা থেকে শিখেছি যে, আপনি যদি কোন কিছু অর্জনের জন্য কঠোর পরিশ্রম করেন এবং এতে আরও শক্তি, সময় ধারাবাহিকতা প্রয়োগ করেন তবে আপনি আরও ভাল ফলাফল পাবেন। এটি কর্ম থেকে আসে।”- লুই সি.কে

লুই সি.কে এর এই কথাটি আমাদের প্রত্যেকের জীবনে চরম সত্য৷ কথায় আছে, পরিশ্রম ব্যতীত রাজার ধনও একদিন ফুরিয়ে যায়। খেটে খাওয়া শ্রমিক থেকে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা সকলের জীবনের সৌভাগ্যের মূল চাবিকাঠি হচ্ছে পরিশ্রম। মানবজীবনের স্বার্থকতা যেমন কর্মের মধ্যে নিহিত তেমনি জাতীয় অগ্রগতি ও উন্নয়নও নির্ভর করে পরিশ্রমের উপর।

শ্রমের মর্যাদা:– মানুষের জন্ম স্রষ্টার অধীন, কিন্তু কর্ম মানুষের অধীন। জীবন-ধারণের তাগিদে মানুষ নানা কর্মে নিয়োজিত হয়। কৃষক ফসল ফলায়, তাঁতি কাপড় বোনে, জেলে মাছ ধরে, শিক্ষক ছাত্র পড়ান, ডাক্তার চিকিৎসা করেন, বিজ্ঞানী আবিষ্কার করেন। এঁরা প্রত্যেকেই মানবতার কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছেন। পৃথিবীতে কোনো কাজই ছোট নয়। আর্থসামাজিক পদমর্যাদায় হয়তো সবাই সমান নয়। কিন্তু এদের প্রত্যেকেরই মেধা, মনন, ঘাম ও শ্রমে সভ্যতা এগিয়ে চলেছে।

তাই সকলের শ্রমের প্রতিই আমাদের সমান মর্যাদা ও শ্রদ্ধা থাকা উচিত। উন্নত বিশ্বে কোনো কাজকেই তুচ্ছ করা হয় না। সমাজের প্রতিটি লোক নিজের কাজকে গুরুত্ব দিয়ে করার চেষ্টা করে। তাই চীন, জাপান, কোরিয়া, রাশিয়া, ইংল্যান্ড, আমেরিকা, ফ্রান্স, কানাডা প্রভৃতি দেশ উন্নতির চরম শিখরে উঠেছে। আমাদের দেশে শারীরিক শ্রমকে বিশেষ মর্যাদার চোখে দেখা হয় না। তার ফলে আজও সুজলা-সুফলা-শস্য-শ্যামলা দেশের অধিবাসী হয়েও আমরা চরম দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করি।

ইসলামে শ্রমের মর্যাদাঃ– ইসলামে শ্রমের মর্যাদা অনেক। একমাত্র ইসলামই শিখিয়েছে শ্রীমিকের মর্যাদা কি হাওয়া উচিত। আমাদের প্রিয় নবী হযরত  মুহাম্মদ (সঃ) বলেছেন –

শ্রমিকের গায়ের ঘাম শুকিয়ে যাওয়ার আগেই তার পাওনা পরিশোধ কর

ইসলাম শ্রমিকদের দিয়েছে সম্মান এবং জান্নাতের সুসংবাদ। ইসলাম ব্যবসাকে করেছে হালাল আর সুদকে করেছে হারাম। কেয়ামতের দিন সৎ ব্যবসায়ী শহীদদের সাথে থাকবে।হযরত  মুহাম্মদ (সঃ) ছিলেন কঠোর পরিশ্রমী। মক্কা বিজয় হয়েছে এই কঠোর শ্রমের মাধ্যমে। শ্রমের মধ্যে কোনো লজ্জা নেই লজ্জা অলসতায়।

ছাত্র জীবনে শ্রমের গুরুত্বঃ– ছাত্রনং অধ্যয়নং তপঃ একজ ছাত্রের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত অধ্যায়ন করা। জীবনকে সুন্দর করে গড়ে তুলতে হলে ছাত্রজীবন থেকেই শ্রম দিতে হবে আর সেই শ্রম হবে  অধ্যায়ন করা। অধ্যায়নে শ্রম না দিলে পরবর্তীতে একজন ছাত্র শ্রমের গুরুত্বকে অবলোকন করতে পারবে না। ফলশ্রূতিতে সে হয়ে পর্বে শ্রমবিমুখ। যে অলস ও শ্রমবিমুখ তার জীবনে নেমে আসে অসুন্দরের অভিশাপ। নানা ব্যর্থতার গ্লানিতে সে-জীবন পদে পদে অনাদৃত, লাঞ্ছিত। তার জীবনের স্বাভাবিক অগ্রগতি রুদ্ধ হয়।

শ্রম ও সভ্যতা : যুগে যুগে মানবসভ্যতার যে ক্রমবিস্তার, শ্রীবৃদ্ধি, তা লক্ষ–কোটি মানুষের তিল তিল শ্রমেই সম্ভব হয়েছে। একুশ শতকের সভ্যতার চরম উন্নতির দিকে তাকিয়ে আমরা মাঝে মাঝে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যাই। সভ্যতার এ চরম বিকাশের মূলে রয়েছে যুগে যুগান্তরের লক্ষ–কোটি মানুষের অফুরন্ত শ্রম। বহু মানব তাদের বহু দিনের শ্রম তিলে তিলে দান করে গড়ে তুলেছে সভ্যতার তিলোত্তমা মূর্তি। তাদের নাম ইতিহাসে লেখা হয় নি।
তারা পাহাড় ভেঙে পথ প্রস্তুত করেছে, সেতু বন্ধনে বেঁধেছে নদীর উভয় তটভূমিকে। নির্মাণ করেছে প্রাসাদ অট্টালিকা। ফলিয়েছে সোনার ধান, কেউ বুনিয়েছে লজ্জা নিবারণের বস্ত্র। কেউবা তৈরি করেছে জীবনকে সুন্দর ও আকর্ষণীয় করার নানা দ্রব্যসামগ্রী। সবার পরিশ্রমের যৌথ প্রয়াসে সভ্যতার এ অনবদ্য বিকাশ হয়েছে। সভ্যতা মানুষের পরিশ্রমের সম্মিলিত যোগফল।

শ্রমের মর্যাদা রচনা ১২ পয়েন্ট

এই অংশে শ্রমের মর্যাদা রচনা ১২ পয়েন্ট নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। সুতরাং যে সকল শিক্ষার্থীরা শ্রমের মর্যাদা রচনা ১২ পয়েন্ট খুজছে তাদের জন্য এই অংশটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চলো জেনে নিই শ্রমের মর্যাদা রচনার ১২ পয়েন্ট।

ভূমিকাঃ “যে পরিশ্রম করে সে কখনও হতাশ হয় না; কারণ সমস্ত কিছুই পরিশ্রমের দ্বারা সম্পন্ন হয়।”- মিনান্ডার

একটি সফল ও সার্থক জীবনের পূর্বশর্ত হচ্ছে “পরিশ্রম “। শ্রম ব্যতীত সফলতাকে কখনোই নিজের ঝুলিতে আবদ্ধ করা সম্ভব নয়। আমাদের আজকের এই আধুনিক সভ্যতা বহু মানুষের বহু যুগের পরিশ্রমের ফল। সুন্দর, স্বচ্ছল, সফল জীবনের প্রধান সূত্র হচ্ছে সততার সাথে পরিশ্রম করা৷ কৃষক পরিশ্রম করে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ফসল ফলায় বলে আমাদের খাদ্যের মজুদ হয়। বিজ্ঞানীদের দিন-রাত পরিশ্রমের ফল আমাদের আজকের আধুনিক সভ্যতা। মূলকথা, সফলতা ও পরিশ্রম একসূত্রে গাঁথা।

পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি: সৌভাগ্য আকাশ থেকে পড়ে না। জীবনে সৌভাগ্য অর্জনের জন্য প্রচুর পরিশ্রম ও নিরন্তর সাধনার দরকার হয়। সব মানুষের মধ্যে সুপ্ত প্রতিভা আছে। পরিশ্রমের দ্বারা সেই সুপ্ত প্রতিভাকে জাগিয়ে তুলতে হয়। যে মানুষ কর্মকে জীবনের ব্রত হিসেবে গ্রহণ করেছে, জীবনসংগ্রামে তারই হয়েছে জয়।

শ্রমের সাথে সভ্যতার বিকাশের সম্পর্কঃ একসময় মানুষ বন-জঙ্গলে বসবাস করতো। পরে তারা নিজেদের সুরক্ষার জন্য গুহা খনন আরম্ভ করে। কাঁচা মাংস খাওয়া বাদ দিয়ে ধীরে ধীরে কৃষিকাজ আরম্ভ করে। শ্রমের মাধ্যমে ধীরে ধীরে সভ্যতা বিকাশের গল্প আরম্ভ হয়। শ্রম ব্যতীত কখনোই আমরা আজকের একুশ শতাব্দীর আধুনিক সভ্যতায় উপনীত হতে পারতাম না৷ নদীর বুকে দাঁড়িয়ে থাকা সেতু, বড় বড় দালানকোঠা, চারপাশের আধুনিক আলোকসজ্জা সব কিছুর পেছনে রয়েছে বহু বছরের অজস্র মানুষের দৈহিক ও মানসিক শ্রম।

শ্রম ও কর্মক্ষেত্রঃ “পরিশ্রম তোমার চরিত্রকে পরিস্ফুটিত করে তোলে।” – স্যাম এউইং

কোন মানুষের চরিত্রের সুন্দর দিকসমূহ পরিস্ফুটিত হয় একমাত্র শ্রমের মাধ্যমে। কথায় আছে, “অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা “। শ্রম ও সততাকে অবলম্বন করে যে কাজই করা হোক না কেন সে কাজই উত্তম। কারণ, কোন কাজই ছোট নয়। সুন্দর ব্যক্তিজীবন বা সুন্দর দেশ – উভয় ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম যেটি দরকার হয় সেটি হচ্ছে শ্রম। সকল মানুষকেই জীবনযুদ্ধে জয়ী হতে হলে নিরলস পরিশ্রম করে যেতে হয় কারণ, “Life is not a bed of rose”. শ্রমের মর্যাদা তাই সকলকেই উপলব্ধি করতে হবে।

শ্রম ও সফলতাঃ সৃষ্টিকর্তার পরে যদি আর কিছু আমাদের ভাগ্য নিয়ন্ত্রণ করতে পারে সেটি হচ্ছে শ্রম। একমাত্র শ্রম দিয়ে মানুষ তার দুঃসময়কে কাটিয়ে সুসময়কে ফেরত আনতে পারে। শ্রম ব্যতীত সুসময়ের আশা করা অলিক স্বপ্ন দেখা ছাড়া আর কিছু নয়। যে ব্যক্তি তার মেধার উপর বিশ্বাস রেখে পরিশ্রম করে যায় সফলতা তার জন্য সময়ের ব্যপার মাত্র। যে দেশের জনগোষ্ঠী যত বেশি পরিশ্রমী সে দেশের অবস্থান ততই দৃঢ়। ব্যক্তিজীবন ও রাষ্ট্রজীবন উভয় ক্ষেত্রে সফলতা অর্জন করতে হলে শ্রমের কোন বিকল্প নেই। শ্রমের মর্যাদা সঠিকভাবে অনুধাবন করে গত তিন দশকে চায়না নিজেদের অর্থনৈতিকভাবে নিয়ে গেছে অন্য উচ্চতায়।

কর্মের প্রতি নিবেদিতপ্রাণ ব্যক্তি জীবনে সফল সৈনিক হতে পারে। কর্মহীন ব্যক্তি সমাজের বোঝাস্বরূপ। অন্যদিকে শ্রমশীলতাই মানবজীবনের সৌভাগ্যের চাবিকাঠি। আমাদের জীবনে উন্নতি এবং সুখ বয়ে আনতে হলে পরিশ্রমের বিকল্প নেই।

শ্রমবিমুখতাঃ শ্রমের বিপরীত নাম হল শ্রমবিমুখতা বা আলস্য।  অলস মস্তিস্ক যেমন শয়তানের কারখানা তেমনি এটি এক ভয়ানক ব্যাধিও বটে। শ্রমবিমুখতা মানুষ জীবনে উন্নতি সাধিত করতে পারে না বরং তাদেরকে অন্যের উপর নির্ভর করে থাকতে হয়। শ্রমবিমুখতায় কোনো আনন্দ নেই, আছে লজ্জা। ব্যর্থতাই শ্রমবিমুখতার চূড়ান্ত ফলাফল। পানিহীন একটি চারা গাছ যেমন ধীরে ধীরে নিষ্প্রাণ হয়ে পরে ঠিক তেমনি অলস শরীর ধীরে ধীরে হারিয়ে ফেলে কর্মচঞ্চলটা।বাংলায় একটি প্রবাদ আছে-

পরিশ্রমে ধন আনে, পুণ্যে আনে সুখ।  আলস্যে দারিদ্রতা আনে, পাপে আনে দুঃখ।

উপসংহার: পরিশ্রম শুধু সৌভাগ্যের নিয়ন্ত্রক নয়, সভ্যতা বিকাশেরও সহায়ক। মানবসভ্যতার উন্নতি-অগ্রগতিতে শ্রমের অবদান অনস্বীকার্য। আমরা স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের নাগরিক। সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন ও সাধনা আমাদের।

শ্রমের মর্যাদা রচনা ২৫ পয়েন্ট

এই অংশে শ্রমের মর্যাদা রচনা ২৫ পয়েন্ট নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। সুতরাং যে সকল শিক্ষার্থীরা শ্রমের মর্যাদা রচনা ২৫ পয়েন্ট খুজছে তাদের জন্য এই অংশটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চলো জেনে নিই শ্রমের মর্যাদা রচনা ২৫ পয়েন্ট।

ভূমিকা : অলসতার পাথরে না ডুবে যেকোনো কাজে নিজেকে নিয়োজিত করার নামই শ্রম। প্রাণীরা কিছু করেই বেঁচে থাকে। এজন্য মানুষকে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়। প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে তার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করে আসছে। অণু থেকে ভবন, সভ্যতার প্রতিটি সৃষ্টির মূলে রয়েছে শ্রম। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত, এই জগতের সবকিছু—অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা—শ্রমের মাধ্যমেই অর্জিত হয়েছে। পবিত্র কুরআনে ঘোষণা করা হয়েছে-
“মানুষের জন্যে শ্রম ব্যতিরেকে কিছুই নেই।”
জ্ঞানীর জ্ঞান, বিজ্ঞানের অত্যাশ্চর্য আবিষ্কার, ধর্মসাধকের আত্মোপলদ্ধি, ধনীর ধনৈশ্বর্য, যোদ্ধার যুদ্ধে জয়লাভ সবকিছুই শ্রমলব্ধ। সুতরাং পরিশ্রমের কোনো বিকল্প নেই। এবং যথার্থ পরিশ্রমী ব্যক্তি তার জীবনে সৌভাগ্য বয়ে আনতে পারে।তাই কবির ভাষায় বলতে হয়—
“কৃষকের পুত্র কিংবা রাজার কুমার
সবারই রয়েছে কাজ এ বিশ্ব মাঝার।”
শ্রম কী: শ্রম শব্দের আভিধানিক অর্থ পরিশ্রম, শারীরিক পরিশ্রম। সাধারণত যে কোনো কাজই শ্রম। এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার সংগ্রামের প্রধান হাতিয়ার হল কঠোর পরিশ্রম। কঠোর পরিশ্রমে বিশ্ব ও মানব সভ্যতার বিজয় স্তম্ভ গড়ে উঠেছে।
শ্রমের শ্রেণিবিভাগ: শ্রম দুই প্রকারঃ মানসিক শ্রম ও শারীরিক শ্রম। শিক্ষক, ডাক্তার, বিজ্ঞানী, সাংবাদিক, অফিস কর্মী যে ধরনের শ্রম করেন তাকে মানসিক শ্রম বলে। আবার কৃষক, শ্রমিক, তাঁতি, জেলে, মজুরের শ্রম হলো শারীরিক শ্রম। পেশা বা কাজের ধরন অনুযায়ী একেক শ্রেণির মানুষের কাজ একেক রকম। তবে শ্রম শারীরিক হোক বা মানসিক, উভয়ের সম্মিলিত শ্রমে গড়ে উঠেছে মানব সভ্যতা।
শ্রমের প্রয়োজনীয়তা: মানুষ তার নিজের ভাগ্য। কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমেই তাকে এই ভাগ্য গড়ে তুলতে হবে। তাই মানুষের জীবনে পরিশ্রমের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। কর্ম বিমুখ অলস লোকেরা কখনই উন্নতি করতে পারে না। পরিশ্রম ছাড়া জীবনের অগ্রগতি কল্পনা মাত্র।
জীবনে আত্মবিশ্বাস পেতে হলে নিরলস পরিশ্রম করতে হয়। পৃথিবীতে যে জাতি যত বেশি পরিশ্রমী, সে জাতি তত বেশি উন্নত। তাই ব্যক্তি ও জাতীয় পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত হতে হলে মানুষকে কঠোর পরিশ্রমী হতে হবে। শুধুমাত্র কঠোর পরিশ্রমই পারে মানুষের জীবনকে সুন্দর ও অর্থবহ করে তুলতে।

শ্রমের মর্যাদা: মানুষের জন্ম ঈশ্বরের অধীন, কিন্তু কর্ম মানুষের অধীন। বেঁচে থাকার তাগিদে মানুষ নানা কাজে নিয়োজিত। কৃষক ফসল ফলায়, তাঁতিরা কাপড় বুনে, জেলেরা মাছ ধরে, শিক্ষকরা ছাত্রদের পড়ায়, ডাক্তাররা চিকিৎসা করে, বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেন। তারা সবাই মানবতার কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছেন। পৃথিবীর কোন কাজই ছোট নয়। আর্থ-সামাজিক অবস্থায় সবাই সমান নাও হতে পারে। কিন্তু তাদের প্রত্যেকের মেধা, চিন্তা, ঘাম ও শ্রম দিয়ে সভ্যতা এগিয়ে চলেছে।
তাই সকলের শ্রমের প্রতি আমাদের সমান মর্যাদা ও সম্মান থাকা উচিত। উন্নত বিশ্বে কোনো চাকরিকে গ্রাহ্য করা হয় না। সমাজের প্রতিটি মানুষই তার কাজ গুরুত্বের সাথে করার চেষ্টা করে। তাই চীন, জাপান, কোরিয়া, রাশিয়া, ইংল্যান্ড, আমেরিকা, ফ্রান্স, কানাডা প্রভৃতি দেশ উন্নয়নের শিখরে পৌঁছেছে। আমাদের দেশে কায়িক শ্রমকে বিশেষ মর্যাদার চোখে দেখা হয় না। ফলে সুজলা-সুফলা-শস্য-শ্যামলা দেশের বাসিন্দা হয়ে আজও আমরা চরম দারিদ্রের মধ্যে বসবাস করছি।

উপসংহারঃ বহুকাল পরে বর্তমান পৃথিবীতে শ্রমজীবী মানুষের সামনে এক নবযুগ আসে। মেহনতি মানুষের মর্যাদা দিতে বাধ্য হয় সমাজের ওপরতলার মানুষ। সােভিয়েত ইউনিয়নে, চীনে, ভিয়েতনামে এবং আরও অনেক দেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় মেহনতি মানুষ পালন করে গুরুত্বপূর্ণ সূচনা। বিজ্ঞানের কল্যাণে বৃত্তিমূলক ও কারিগরি শিক্ষার প্রেক্ষাপটে সমাজে শ্রমের গুরুত্ব এখন অনেক স্বীকৃত। শ্রমশক্তিই যে সমাজ-সভ্যতার নির্মাণ ও সাফল্যের চাবিকাঠি, বিশ্ব আজ তা গভীরভাবে উপলব্ধি করতে পেরেছে।

উন্নত দেশগুলােতে শ্রমজীবী মানুষের বহু অধিকার ও মর্যাদা ক্রমেই স্বীকৃতি লাভ করছে। আমরাও যদি সবার শ্রমকেই সমান মর্যাদা দিই তবে দেশ ও জাতি দ্রুত অগ্রগতির পথে এগিয়ে যাবে, যথার্থ কল্যাণ সাধিত হবে। আদি যুগে মানুষ যখন পাহাড়ের গুহায় বাস করত তখন গুহা তৈরিতে যে হাতুড়-বাটাল ব্যবহৃত হত সেটা এখনও নির্মাণ শিল্পের অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে বিবেচিত।

সুতরাং শ্রমের সুফল যুগযুগ ধরে পৃথিবীতে বহমান থাকবে।

শ্রমের মর্যাদা রচনা ২০ প্যারা

শ্রমের মর্যাদা রচনা ২০ প্যারা আমরা শ্রমের মর্যাদা রচনার সকল প্যারা এবং পয়েন্ট নিয়ে আলোচনা করেছি। যে সকল শিক্ষার্থীরা শ্রমের মর্যাদা রচনার ২০ পারা অনুসন্ধান করছে তাদের এই অংশটুকু জানতে হবে।

আমরা ইতিমধ্যে শ্রমের মর্যাদা রচনা সকল অংশ নিয়ে আলোচনা করেছি সকল পয়েন্ট এবং প্যারা আলোচনা করেছি। তাই আমরা সকল শিক্ষার্থীকে একটি আদেশ করবো যেটি হল উপরের দেওয়া পয়েন্ট এবং প্যারাগুলো যেগুলো সহজ সেগুলো বেছে মুখস্ত করতে পারো। সেখানে আছে শ্রমের মর্যাদা রচনা ১২ পয়েন্ট, ২০ পয়েন্ট, ২৫ পয়েন্ট, এবং ২০ প্যারা। এছাড়াও ক্লাস ৭ এবং ক্লাস ১০ এর শিক্ষার্থীরা উপরের দেয়া অনেকগুলো পয়েন্ট থেকে কয়েকটি পয়েন্ট আলাদা করে মুখস্ত করতে পারো।

শ্রমের মর্যাদা রচনা উক্তি

শ্রমের মর্যাদা রচনা উক্তি নিয়ে এখন আলোচনা করা হয়েছে। তাই এই অংশটুকু যারা শ্রমের মর্যাদা রচনা উক্তি অনুসন্ধান করছে তাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই অংশে ১৫ টি সেরা শ্রমের মর্যাদা রচনার উক্তি দেওয়া হয়েছে।

“শ্রম হল মানব মর্যাদার ভিত্তি, কারণ এটি ব্যক্তিদের তাদের দক্ষতা এবং প্রচেষ্টাকে সমাজের উন্নতির জন্য অবদান রাখতে সক্ষম করে।”

“শ্রমের মাধ্যমে, আমরা কেবল জীবিকা অর্জন করি না বরং আমাদের জীবনে উদ্দেশ্য এবং পরিপূর্ণতার অনুভূতিও অর্জন করি।”

“প্রতিটি সৎ কাজ, তার প্রকৃতি বা মর্যাদা নির্বিশেষে, এটি যে শ্রম দেয় তার জন্য সম্মান এবং স্বীকৃতি প্রাপ্য।”

“শ্রমের মর্যাদা প্রতিশ্রুতি এবং উত্সর্গের মধ্যে নিহিত রয়েছে যার সাথে কেউ তাদের কাজের সাথে যোগাযোগ করে, তার অনুভূত তাত্পর্য নির্বিশেষে।”

“শ্রম আমাদের অধ্যবসায়, শৃঙ্খলা এবং দায়িত্বের মূল্যবোধ শেখায়, আমাদেরকে আরও ভাল ব্যক্তিতে পরিণত করে।”

“যখন আমরা সব ধরনের শ্রমের মর্যাদার প্রশংসা করি, তখন আমরা এমন একটি সমাজ তৈরি করি যা প্রতিটি পেশাকে মূল্য দেয় এবং সমতার প্রচার করে।”

“সাফল্যের প্রকৃত মাপকাঠি হল কারো কাজের প্রকৃতি নয়, বরং গর্ব এবং সন্তুষ্টি উৎকৃষ্টতা এবং সততার সাথে করা।”

“শ্রম হল একটি শক্তিশালী শক্তি যা সামাজিক বাধা অতিক্রম করে, বিভিন্ন ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে আসা ব্যক্তিদের একটি সাধারণ লক্ষ্য অর্জনে তাদের একত্রিত করে।”

“শ্রম হল একটি মৌলিক অধিকার যা ব্যক্তিদের স্বাধীন ও স্বনির্ভর জীবনযাপন করতে, ব্যক্তিগত বৃদ্ধি এবং বিকাশকে উৎসাহিত করার ক্ষমতা দেয়।”

“শ্রমের মর্যাদাকে সম্মান করার মাধ্যমে, আমরা প্রতিটি ব্যক্তির মূল্য এবং অবদানকে স্বীকৃতি দিই, শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতার সংস্কৃতি গড়ে তুলি।”

“শ্রম হল সেতু যা স্বপ্ন এবং আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবের সাথে সংযুক্ত করে, নিছক ধারণাগুলিকে বাস্তব অর্জনে পরিণত করে।”

“শ্রমের মর্যাদা তার আর্থিক পুরষ্কারের মধ্যে নয় বরং ব্যক্তি এবং সম্প্রদায়ের জীবনে এটির রূপান্তরমূলক প্রভাবের মধ্যে রয়েছে।”

“যখন আমরা শ্রমের মর্যাদাকে স্বীকৃতি দিই, তখন আমরা সকলের অবদান ও সফলতার সমান সুযোগ তৈরি করে সামাজিক ন্যায়বিচার প্রচার করি।”

“শ্রম হল অগ্রগতির ভিত্তি, উদ্ভাবন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং সামাজিক অগ্রগতির চালনা।”

“শ্রমের মর্যাদা একটি সর্বজনীন নীতি যা সীমানা এবং সংস্কৃতিকে অতিক্রম করে, মানুষের কাজের অন্তর্নিহিত মূল্যের কথা মনে করিয়ে দেয়।”

শ্রমের মর্যাদা রচনা pdf

শ্রমের মর্যাদা রচনা pdf File
শ্রমের মর্যাদা রচনা pdf Click Here
শ্রমের মর্যাদা রচনা pdf শ্রমের মর্যাদা রচনা pdf

 

মন্তব্য করুন

You cannot copy content of this page